
বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের একাধিকবার রিজার্ভ বাড়ার দাবি করলেও, গত ৯ মাসে রিজার্ভ কিছুটা কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করছে।রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর বিপিএম-৬ পদ্ধতির হিসাবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এখন ২০.০৭ বিলিয়ন ডলারে রয়েছে।
গত দুই সপ্তাহে রিজার্ভে খানিকটা পতন হয়েছে। ৬ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল ২০.১৭৮৯ বিলিয়ন ডলার। ১৩ দিনে এটি কমে ২০.১০৮৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।মোট রিজার্ভ বর্তমানে ২৫.৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা ৬ মে ছিল ২৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার থেকে কমেছে ০.১২ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৯ মাস পার হলেও রিজার্ভ প্রায় একই অবস্থায় রয়েছে। এই সময়ে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স লাফিয়ে বেড়েছে, আর রপ্তানিতেও গতানুগতিক গতি দেখা গেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দাবি করেছেন, দেশের অর্থপাচার ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে।আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের চারদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ হিসাব প্রকাশ করেছিল।
৩০ জুলাই রিজার্ভ ছিল ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২১ আগস্টেও একই পরিমাণ ছিল। গত ৯ মাসে রিজার্ভ কমেছে প্রায় ০.৪১ বিলিয়ন ডলার।তবে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের বর্তমান স্থিতিতে সন্তুষ্ট বলে একাধিকবার জানিয়েছে।দেশের ইতিহাসে ২০২২ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল সর্বোচ্চ ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলার। তখন বাংলাদেশ ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকের অপেক্ষায় ছিল।
করোনা মহামারীর পর বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতে চাপ পড়েছে। ২০২২ সালের শুরুতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। এর ফলে রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে।আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুদ্রার বিনিময় হার ধরে রাখতে রিজার্ভ থেকে ২৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিক্রি করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ডলার বিক্রি বন্ধ করলেও রিজার্ভে ক্ষয় চলতে থাকে।২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ২৪.৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৯.১২ বিলিয়ন ডলার।
অর্থাৎ রেমিটেন্স ২৮.৩০ শতাংশ বেড়েছে।মে মাসের প্রথম ১৭ দিনে দেশে এসেছে ১৬১ কোটি ডলার রেমিটেন্স। এই হারে চললে মাস শেষে ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আশা করা হচ্ছে।রপ্তানিও ইতিবাচক। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ২১ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.৮৩ শতাংশ বেশি।তবে রেমিটেন্স ও রপ্তানির এই বাড়তি আয় রিজার্ভে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি। এর পেছনে আমদানির চাপ, মুদ্রানীতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কাজ করছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভের স্থিতিশীলতার জন্য শুধু আয় বাড়ানোই যথেষ্ট নয়, দেশের মুদ্রানীতি, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি জরুরি।রিজার্ভ কমলেও অর্থনীতির মূল সূচক যেমন রেমিটেন্স ও রপ্তানি ভালো চলছে। তবে দেশের স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য মুদ্রানীতি ও বৈদেশিক বাজারের চাপ মোকাবেলা জরুরি।