
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে টানা দুই দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় একটি মামলা ও একটি জিডি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মামলায় ৯৮ জনের নাম উল্লেখ করে এক হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তবে মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই স্থানীয় আওয়ামীলীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। যারা গত বছরের ৫ই আগষ্টের পর থেকে এলাকার বাইরে অবস্থান করছে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া চবির নিরাপত্তা দফতরের দেশীয় অস্ত্র লুটের ঘটনায় একটি জিডি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা আর একটি জিডি করা হয়েছে। আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যা করার সব করছি। শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করবো তারা যেন দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরে। শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
হাটহাজারী থানার ওসি আবু কাউসার মোহাম্মদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
হামলায় জড়িতদের নামে মামলা না দিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের নাম জড়ানোয় অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের দাবি, ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে ও প্রশাসন নিজেদের দায় এড়াতে ঘটনাটিকে রাজনৈতিক দিকে নিয়ে যাচ্ছে,এতে করে প্রকৃত দোষীরা পাড় পেয়ে যাবে এবং মামলাও কার্যকর কোনো অগ্রগতি হবে না।
উল্লেখ্য, শনিবার (৩০ আগস্ট) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন একটি ভবনের ভাড়াটিয়া এক ছাত্রীর সঙ্গে ভবনের নিরাপত্তারক্ষীর বাগবিতণ্ডার জেরে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাতে শুরু হওয়া ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আর সংঘর্ষ পরদিন রবিবারও চলেছে দফায় দফায়। এতে অসংখ্য শিখার্থী ও গ্রামবাসী আহত হন। এছাড়া গ্রামের ঘরবাড়ি,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,গাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট করে শিক্ষার্থীরা।
হামলায় শিক্ষার্থী, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, উপ-উপাচার্যসহ কয়েকশ’ ব্যক্তি আহত হন। সংঘাতের মধ্যে রবিবার দুপুর ২টা থেকে ক্যাম্পাস ও আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেটি এখনও বহাল আছে।সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়, গ্রামবাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে তিন শতাধিক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১৪ জন, নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ৩০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
এর মধ্যে সোমবার বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে দুই জন লাইফ সাপোর্টে এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১ জন ভর্তি আছেন।এ ছাড়া এক শিক্ষার্থীর রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার এনআইসিবিডি’তে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার) পাঠানো হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর হোসেন।