
– আলি শরিয়তি উবাচ এর কলাম:
সারাদেশে একধরণের চাপা অস্থিরতা বিরাজ করছে। মিডিয়া চুপ মেরে বসে আছে। তথাকথিত অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও ডিফেন্স সাংবাদিকেরা চোখে-মুখে ঠুলা লাগিয়ে কলমের বিশ্রাম দিয়েছে। মানুষ কিছু জানতে না পেরে, বুঝতে না পেরে কেমন যেন ম্রিয়মাণ ও হতাশায় নিমজ্জিত।
সামাজিক মাধ্যম ও ইউটিউবারদের বক্তব্যে মনে হবে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলছে এবং জেনারেল ওয়াকার কাউকে চাকরিচ্যুত করতে চাওয়ায়, ইউনূস সেটা ঠেকিয়েছেন। অথচ বাস্তবে একদমই তেমনটা নয় বরং সম্পূর্ণ উল্টা ঘটনা ঘটেছে। মূলত আগামী নির্বাচন ও করিডোর প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সেনাপ্রধানের দ্বিমতই এসব গুজব, অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের কারণ। দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে থাকা ও করিডোরের বিপক্ষে থাকার কারণেই জেনারেল ওয়াকারকে ভিলিফাই করা হচ্ছে। অথচ জেনারেল সাহেব সঠিক পথেই আছেন, দেশ ও মানুষের পক্ষেই আছেন। কিন্তু অপপ্রচার ও মিথ্যাচার চালিয়ে তাঁকে ভিলেন বানানোর অপচেষ্টা চলছে।
১. তবে কিছু খবর যে বেরোয় না তা নয়, ফেইসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে নানান তথ্য, অপতথ্য এবং গুজবের ছড়াছড়ি। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে সেখান থেকে ছেঁকে খাঁটি তথ্য বের করা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো কঠিন যজ্ঞ বটে! তবে যা রটে তা বটে! এই প্রাচীন প্রবাদ-সূত্র মেনেই যোগাযোগ করলাম আর্মির সাবেক জেনারেল মি. ব্ল্যাক বক্সের সাথে। তাঁর সাথে আলাপচারিতা ও প্রাপ্ত তথ্য নিয়েই আজকের লেখা।
ক্যান্টনমেন্টের উত্তেজনা, যমুনার জলে তীব্র ঢেউ, জনমানুষের ভেতরে অস্থিরতা ও হতাশার একটি লেখ্যচিত্র নির্মাণের চেষ্টা করবো। পাঠকের দায়িত্ব নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান নিজেকেই ঠিক করা।
২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ চায় রাখাইনে মানবিক করিডোর চালু হোক এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস স্থাপিত হোক এবং এই দুটিকে নিরাপত্তা দিতে US Military Peace Corps ঘাঁটি স্থাপন নিশ্চিত হোক।এসব বাস্তবায়নের জন্য দরকার ইউনূসের মতো অনির্বাচিত সরকার থাকা জরুরি। আর ইউনূসও চায় দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলেছে তাদের।
কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেনাপ্রধান। এই সমস্যা নিয়ে পরে আলাপে যাবো। এর আগে করিডোর ও অন্যান্য বিষয়ে আলাপ শেষ করি।পৃথিবীর যেসব দেশে মানবিক করিডর পরিচালিত হয়েছে এমন অনেক জায়গাতেই অভিজ্ঞতা ভালো হয়নি। এই নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে।
এখানে বিবিসি বাংলার একটি নিউজের লিংক https://shorturl.at/VDQ0w শেয়ার করলাম।
যেসব দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস স্থাপিত হয়েছে, সেসবের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। হোস্ট কান্ট্রির কোন সুফল ও সুরক্ষা তো হয়ই-নি উল্টা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও চাপিয়ে দেয়া রাষ্ট্রনীতিতে পিষ্ট হতে হয়েছে।
আর US Peace Corps সম্পর্কে https://shorturl.at/8dd1J ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে- US Peace Corps Volunteers put their purpose, passion, and skills to work in partnership with host communities in more than 60 countries. অর্থাৎ বিশ্বের ৬০টি দেশে বিভিন্ন ইস্যুতে US Military Peace Corps ঘাঁটি গেড়েছে।
বাংলাদেশ এখন এই গোলকধাঁধার মধ্যে আছে। গোলকধাঁধা এজন্য যে, আমাদের ইন্টেরিম সরকারের প্রধানকে এসব বাস্তবায়ন করতেই বসিয়েছেন কর্তারা। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে যে আমেরিকা ও জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। এখন প্রশ্ন হলো প্রধান উপদেষ্টা কি এসব বাস্তবায়নে সক্ষম? অবশ্যই সক্ষম, তবে কিছু দেশীয় সমর্থন ও পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন। প্যাঁচটা এখানেই লেগেছে।
৩. মানবিক করিডোরের প্রসঙ্গ সামনে আসতেই বিএনপি, সিপিবি সহ অনেক দলই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এমনকি জামায়াতে ইসলামী নরম সুরে হলেও বিশদ ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। অপরদিকে এনসিপি সহ সরকারের বুকে-পিঠে-পেটে-মাথায় বসত করা দলগুলো নীরবতা অবলম্বন করেছে, অর্থাৎ তারা সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে একমত। কিন্তু এতেও সরকারের সমর্থন যথেষ্ট হয়নি। আরও সমর্থন দরকার।সেই সমর্থন পাওয়া ও না-পাওয়া নিয়েই যত ঝামেলা এবং ক্যান্টনমেন্টে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রধান উপদেষ্টা চান সামরিক বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনী এসব ক্ষেত্রে পূর্ণ সমর্থন দিক। কিন্তু সেনাপ্রধান মানবিক করিডোর প্রশ্নে পূর্ব-শর্ত দিয়েছেন। আগে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে। তারপরে করিডোরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। প্রধান উপদেষ্টা বা আমেরিকা কিংবা জাতিসংঘ এটা মানবে কিভাবে? এমনকি এই সামর্থ্যও তাদের নেই। এটা সম্পূর্ণই মায়ানমারের সরকার (জান্তা) ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির ইস্যু। আমার ধারণা সেনাপ্রধান জেনেশুনেই এই শর্ত দিয়েছেন। যাতে করিডোর দিতে না হয়। কারণ তিনি জানেন, এই শর্ত পূরণ সম্ভব নয়। কিন্তু বিধি বাম!
প্রধান উপদেষ্টা তো থেমে যাবার ব্যক্তি নন। তিনি যে অঙ্গীকার করেছেন তাঁর ত্রাতাদের কাছে!প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর কিচেন ক্যাবিনেট মিলে সেনাপ্রধানকে চাকরিচ্যুত করার উদ্যোগ নিলেন। প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) এর মাধ্যমে নিয়মমাফিক ‘নোট’ পাঠিয়ে দিলেন রাষ্ট্রপতির কাছে। আজকালকার যুগে তথ্য তো আর গোপন থাকে না। সেনাপ্রধান জেনে গেলেন মুহূর্তের মধ্যেই এবং সেই ‘নোটে’র কবর দিয়ে দিলেন। এরপরের ঘটনা আরও নির্লজ্জ ও ভয়াবহ।প্রধান উপদেষ্টার সাথে সেনাপ্রধান দেখা করলেন। প্রধান উপদেষ্টা বললেন, আপনি তো ক্ষমতা দখল করতে চান, আমাকে সরিয়ে দিতে চান।
উত্তরে আর্মি চিফ জানালেন, শুরু থেকেই আমি আপনাকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা করে আসছি। কখনও ব্যত্যয় ঘটেনি। আপনাকে সরিয়ে ক্ষমতা দখলের প্রশ্নই আসে না। কেবল দ্রুত নির্বাচনের প্রশ্নে আমি অনড় এবং এটা জাতির কাছে দেয়া আমার অঙ্গিকার; এখান থেকে আমার সরে যাবার সুযোগ নেই। আমি সৈনিক, আমি মুসলমান এবং এক কথার মানুষ। ফলে আপনার সাথে বিরোধের কোন সুযোগ নেই আমার। আর দেশবাসীর কাছে নির্বাচন প্রসঙ্গে দেয়া অঙ্গীকারের সাথে আপোষ করাও আমার পক্ষে অসম্ভব। আমার সৈনিকেরাও দ্রুত ব্যারাকে ফিরতে চায়।
তাকিয়ে থেকে প্রধান উপদেষ্টা এবার আসল আলাপ পাড়লেন। করিডোরের প্রসঙ্গে বললেন। সেনাপ্রধান স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন- আগে রোহিঙ্গা ফেরত যাবে, এরপরে করিডোরের বিষয়ে আলাপ করা যাবে। কারণ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ নিয়ে আমি চাকরিতে যোগ দিয়েছি। একজন সৈনিক হিসেবে আমার পক্ষে শপথ ভঙ্গ করা অসম্ভব।সেনাপ্রধান এবার গলা নিচু করে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, স্যার এই মানবিক করিডোর দিয়ে বাংলাদেশের কি লাভ হবে?
উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা কিছুক্ষণ দুই হাত ছুঁড়ে ছুঁড়ে কতগুলো অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের ক্যানভাস করলেন।ক্যানভাস করতে করতে প্রধান উপদেষ্টা বলে বসলেন, আপনাকে ও আমাকে, দুজনকেই তো একই পক্ষ (আমেরিকা ও জাতিসংঘ) দেখভাল করছে। কাজেই তাদের জন্য কিছু কাজ তো করতে হবে। আর আপনি তাদের অনুরোধে ৫ আগস্টের আগে-পরে হাসিনার পতন ঘটাতে অনেক অবদান রেখেছেন।এবার সেনাপ্রধান একটু বিব্রত হলেন।
কিন্তু পরক্ষণেই খুব শক্তভাবে বললেন-স্যার, আমি কারও অনুরোধে বা ফোনে কিছু করিনি বা করবোও না। আমার সৈনিকদের মতামত, কাণ্ডজ্ঞান এবং দেশের বাস্তবতার ভিত্তিতেই যা সঠিক ছিল তাই করেছি। এখনও সংবিধান ও সামরিক প্রবিধানের বাইরে আমি কিছু করবো না।করিডোর নিয়ে আলাপ এখানেই শেষ হয়ে যায়।এরপরে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেনাপ্রধান একজন শীর্ষ কর্মকর্তার নামোল্লেখ করে অবসরের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বুঝিয়ে বললেন। বৃদ্ধ সরকার প্রধান সম্মতিও দিলেন। প্রথমবারের মতো সংকট কেটে গেল বলে মনে হয়।কিন্তু না। বড় বিপদ সামনে অপেক্ষা করছিল।
৪. সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমেরিকা সফরের জন্য ছুটি ও মেয়ের গ্রাজুয়েশন সেরিমনিতে যোগ দেবার জন্য বাড়তি ছুটিও মঞ্জুর করিয়ে আনলেন। কিন্তু ক্যান্টনমেন্টে ফিরে শীর্ষপদস্থ অফিসার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে বিশদ আলাপ করলে আমেরিকা সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে পরদিন আর আমেরিকা যাননি।সাক্ষাতের পরেরদিন সকালেই প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে বিধি মোতাবেক প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) এস এম কামরুল হাসানের অবসরের ‘নোট’ পাঠানো হলো।
কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত, প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দেননি, ফলে রাষ্ট্রপতির কাছেও ফাইল যায়নি। উল্টা এই তথ্য ফাঁস করে দিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাছে, যা দ্রুতই পিএসও সাহেবের কাছেও পৌঁছে গেলো। পিএসও ছুটলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসের কাছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ইনি আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের আশ্রয় ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। এবার এস এম কামরুল হাসানকেও সহযোগিতা করলেন। কামরুল সাহেবের বিপদ কেটে গেলো কিন্তু বিপদ ধেয়ে আসলো তিন বাহিনীর উপরে।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে পিএসও এস এম কামরুল হাসান তিন বাহিনীর প্রধানের চাকরিচ্যুতির প্রজ্ঞাপন তৈরি করে বঙ্গভবনে পাঠানো হলো। একইসাথে তিন বাহিনীর তিনজন প্রধানের নামের তালিকাও প্রজ্ঞাপন আকারে পাঠানো হলো। বিদ্যুৎ গতিতে খবর চলে গেলো ক্যান্টনমেন্টে। এদিকে প্রজ্ঞাপনের ফাইলও বঙ্গভবনের শ্যাডার মেশিনে ঢুকে গেছে।সেই যে ক্যান্টনমেন্ট উত্তেজিত ও উত্তপ্ত হলো সেটা আর থামছেই না।
এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে একই ইস্যুতে পররাষ্ট্র সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে গেছে সকল ক্যান্টনমেন্টে। অফিসার ও সৈনিকেরা সেনাপ্রধানের পক্ষে ব্যাপকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে।সেনাপ্রধান হিসেবে দুবারই লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসানের নাম সুপারিশ করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। বিমান ও নৌবাহিনীর সুপারিশকৃত নামের তথ্য জানতে পারিনি।
৫. যে সেনাপ্রধান জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্রদের সাথে সহায়ক ভূমিকা পালন করলেন, তাকেই এখন কেন বিদায় করার চেষ্টা করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস?এই প্রশ্নটাই এখন সবচেয়ে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। এর উত্তরও খুব জটিল নয়।সেনাপ্রধান চান ডিসেম্বরে নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিতে। কিন্তু ড. ইউনূস সেটা চান না। তিনি আরও অনেকদিন বা আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকতে চান।ক্ষমতায় থাকার জন্য মানবিক করিডোর, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস এবং US Military Peace Corps এর ঘাঁটি, এই সবকিছু দিতে প্রস্তুত ড. ইউনূস।
আর ইউনূসের বিদেশি বন্ধুরাও এসব চায়। চাওয়া পাওয়ার হিসাব মিলে যাওয়ায় আমেরিকা ও জাতিসংঘের পূর্ণ সহযোগিতা পেয়ে যাচ্ছেন ইউনূস। কিন্তু সেনাপ্রধান সহ তিন বাহিনীর কেউই ইউনূসের এই আকাঙ্ক্ষার সাথে একমত নন। কারণ তারা জাতির কাছে করা অঙ্গীকার রক্ষা করতে আপোষহীন।বাস্তবতা হলো- জেনারেল ওয়াকার সেনাপ্রধান থাকলে ইউনূস সাহেবকে নির্বাচন দিতেই হবে এবং করিডোর ইত্যাদি দেয়াও বন্ধ করতে হবে। দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জেনারেল ওয়াকার এবং অন্য দুই বাহিনীর প্রধান এক ও অভিন্ন অবস্থানে রয়েছেন।প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলো- জেনারেল ওয়াকারকে সরিয়ে জেনারেল কামরুল হাসানকে কেন সেনাপ্রধান বানানোর চেষ্টা করছে ইউনূস গং?
কারণ জেনারেল কামরুল হাসান এবং ড. ইউনূস-খলিল গং একই অক্ষরেখায় অবস্থান করছেন। তারা পরস্পরের উপরে আস্থাশীল ও বিশ্বস্ত এবং মার্কিন ও জাতিসংঘের স্বার্থে একযোগে-একসুরে ষড়যন্ত্র করতে জোটবদ্ধ হয়েছেন। অপরদিকে জেনারেল ওয়াকার এক্ষেত্রে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে। সমস্যাটা এখানেই।এজন্যই ইতোমধ্যে অন্তত ২বার জেনারেল ওয়াকার সহ তিন বাহিনীর প্রধানকে সরানোর চেষ্টা করেছেন ইউনূস গং। তৃতীয়বার কিংবা পরেও যদি ইউনূস গং এই উদ্যোগে সফল হন, তাহলে বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাবে। মার্কিনীদের করদ রাজ্যে পরিণত হবে।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-জেনারেল ওয়াকার থাকলে গণতন্ত্র আসবে, ড. ইউনূস থাকলে গণতন্ত্র আসবে না। ড. ইউনূস নির্বাচন দিবেন না, ওয়াকার নির্বাচনের পক্ষে।
ড. ইউনূস থাকলে করিডোর সহ বিদেশিদের অন্যান্য সকল সুবিধা দিয়ে দিবে, কিন্তু ওয়াকার এসবের সঙ্গে একমত নন। দুজনের মধ্যে পার্থক্যটা এখানেই স্পষ্ট।ফলে অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধান প্রায় মুখোমুখি। ড. ইউনূসের সেইফ এক্সিটের সুযোগ থাকলেও সেনাপ্রধানের সামনে এখন ‘ডু অর ডাই’ অবস্থা! আজকে দেশ ও জনগণের পক্ষে থাকায় জেনারেল ওয়াকার সাহেবকে এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
শেষকথাঃ
আরেকটি বিষয় হলো- পেশাদারিত্ব, সততা, দক্ষতা এবং প্রচণ্ড ধার্মিক হিসেবে সেনাপ্রধানের ব্যাপক সুনামের ফলে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা অসম্ভব হয়ে গেছে। ফলে সমাধানের সূত্র হিসেবে কামরুল হাসানের চাকরি সম্ভবত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হবে।লেখাতে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, ইউনূস গং মার্কিন স্বার্থ রক্ষা ও নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতায় থাকার লোভে জেনারেল ওয়াকারকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এটার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই জেনারেল কামরুল হাসানের অবসরের প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। ইউনূস সাহেব আপাতত সফল হননি। কিন্তু আগামীতে?অনেকের মনে থাকার কথা গত ৩ আগস্ট জেনারেল ওয়াকার গান গেয়েছিলেন- ‘আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেবো আকাশে’। তাহলে এবার কি গাইবেন- ‘ভালোবাসা নিতে জানো, দিতে জানো না’?