
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে মানবিক করিডর স্থাপনের কথা জানিয়েছিলেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তারপর থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নানাভাবে এর প্রতিবাদ করে আসছিলো। করিডর ইস্যু নিয়ে দেশবাসীকে সচেতন করতে তারা ব্যাপক কার্যক্রম চালাচ্ছিলো। অপরদিকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকে নরম সুরে কথা বলে আসছিলো এবং বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
অবশেষে করিডর ইস্যু যখন চূড়ান্ত হওয়ার দিকে এগোচ্ছে তখন টনক নড়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর। ইতোমধ্যে মিয়ানমারে নিযুক্ত প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা আফতাবকে প্রত্যাহারের নির্দেশে সবাই নড়েচড়ে বসেছে। এই প্রত্যাহার নির্দেশ মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে খারাপ কিছুরই নির্দেশ করে। এমন অবস্থায় প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতারা করিডর ইস্যু নিয়ে সড়ব হয়েছেন। তবে এখনও এই বিষয়ে কিছু বলেনি জামায়েত ইসলামী।
করিডর ইস্যু নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘করিডর নিয়ে আপনারা কথা না বলে এটার জন্য নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব দিন। তারা দেশের জনগণের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে। আপনাদের দায়িত্ব এটা নয়, আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নুর অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বন্দর হচ্ছে চট্টগ্রাম। এ বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলা হচ্ছে। করিডোরের নামে খাল কেটে কুমির আনা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে সহযোগিতা দেয়ার জন্য এ করিডোর দেয়া হচ্ছে। আমরা করিডর দেয়া থেকে বিরত থাকা ও বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়া হতে বিরত থাকার আহ্বান জানাব।’
করিডর ইস্যু নিয়ে গতকাল ১৬ই মে বিবৃতি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। বিবৃতিতে তারা বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণে প্রস্তাবিত শর্তসাপেক্ষ কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তির খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু বিদেশি শক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত এই উদ্যোগ কেবল মানবিক সহায়তার মোড়কে উপস্থাপিত হলেও এর অন্তর্নিহিত লক্ষ্য অনেক বেশি জটিল এবং আশঙ্কাজনক।
এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশও করিডর ইস্যু নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, সরকার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তথাকথিত “মানবিক করিডর”প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিদেশি শক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় একধরনের ইতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশি রাষ্ট্র কিংবা বহুজাতিক গোষ্ঠীর কাছে ইজারা দেওয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে নানা আলোচনা ও প্রস্তুতি চলমান রয়েছে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন করিডর ইস্যু নিয়ে বলেছেন, মানবিক করিডরের প্রয়োজন আছে কি না, সেই করিডরের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, বা সেখানে কী ধরনের পারাপার হবে-এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
প্রায় সব দলের নেতারা এবং দলীয়ভাবে করিডর ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু সরকার করিডর ইস্যু নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলছে। গোপণে নানারকম কর্মকান্ড ইতোমধ্যে চলমান রয়েছে। তাই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত আসবে এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যা শুরু থেকেই করে আসছিলো। এখন সেই পথেই হাটছে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলগুলো।