
৩০শে আগষ্ট রাত থেকে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় জোবরা গ্রামবাসীর সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ৩১শে আগষ্ট। গ্রামবাসীর অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে ১৪৪ ধারা জারি থাকা অবস্থায় ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে।
৩০শে আগষ্ট মধ্যরাতে এক ছাত্রীকে ভবক্নে দেড়ি করে প্রবেশ করা নিয়ে দাড়োয়ানের সাথে বাকবিতন্ডা থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ধীরে ধীরে তা রূপ নেয় ভয়াবহ সংঘর্ষে। ইতিহাসের বর্বরতম দিনের দেখা যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণ প্রায় তিন শতাধিক আহত হন।স্থানীয়দের বসতবাড়ি, দোকানপাট,গবাদি পশু,গাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট চালায় চবি শিক্ষার্থীরা।
ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ: শিক্ষার্থীদের হামলায় ৭০-৮০টি ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ৮টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। গ্রামে থাকা ৪০-৫০টি দোকান ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। বসতবাড়ির জানালা,দরজার ভাঙচুর করা হয়। আরও অভিযোগ রয়েছে, হামলাকারীরা ৪টি মোটরসাইকেল ও ৫টি অটোরিকশাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুট করে শিক্ষার্থীরা।
লুটপাটের ঘটনা: শুধু ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ নয়, শিক্ষার্থীরা লুটপাটও চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে ৫টি গরু লুট করা হয়েছে। এছাড়া অন্তত ১৫-২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ অর্থ লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। তবে নগদ অর্থের সঠিক অংক এখনও নির্ধারণ করা যায়নি।
গ্রামবাসীর অভিযোগ: গ্রামবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষরা জানান গতকাল রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের বাসবাড়িতে ভাঙচুর চালায়। দিনের বেলাও হামলা ভাঙচুর লুটপাট অব্যাহত রাখে ছাত্ররা। সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়েও হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন গ্রামের স্থানীয়রা। হামলার সময় গ্রামবাসীরা অনেকে প্রাণ বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। তাদের দাবি, শিক্ষার্থীদের এ হামলায় পুরো জোবরা গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থী নামধারী সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তুর দাবি করে তারা। গ্রামে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, মানুষজন আতঙ্কে ঘরবাড়িতে ফিরতে পারছে না।
প্রশাসনের ভূমিকা: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাত থেকেই সরব থাকলেও সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। সংঘর্ষের অনেক সময় পাড় হয়ে গেলেও পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আসেনি। তবে সেনাবাহিনীর একজন কর্তব্যরত অফিসার জানান, বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তারা নিজে থেকে সেখানে উপস্থিত হয়নি। প্রশাসন যখনই জানিয়েছে তারা সাথে স্থে এসেছে। সেনাবাহিনীকে প্রশাসনের দেড়ি করে অবিগত করা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। অনেকেই অভিযোগ করেছেনে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ভাইবা বোর্ডে নিজেদের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য এই সংঘর্ষের মধ্যেও নিয়োগ বোর্ড বসায় প্রশাসন। যেখনে ব্যস্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকের। যার ফলেই সেনাবাহিনীকে সময়মতো ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেনি প্রশাসন।