
রংপুরে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর সেনপাড়ায় তার বাড়ি ‘স্কাই ভিউ’য়ে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা বাড়িতে ঢিল ছুড়ে জানালার কাচ ভাঙচুর করে এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়।
এর আগে সন্ধ্যায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলম জি এক কাদেরকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়। এর পরপরই জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পোস্টে তিনি লিখেন:
“জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় দোসর। বিরোধী দলের যাবতীয় সুবিধা ভোগ করে আওয়ামী লীগকে সরকারি দলের বৈধতা দিয়েছিল এই জাতীয় পার্টি। প্রত্যেক ইলেকশনের আগে অবৈধ সরকারি দলের বিরোধিতার নামে ভন্ডামি করতো। তারপর নির্বাচনের ঠিক কয়েকদিন আগে জিএম কাদের ভারতে গিয়ে নেগোসিয়েশন করে ডামী বিরোধী দল সেজে বসে থাকতো।। সেই জিএম কাদের এখনো বাইরে কিভাবে? সরকারকে ধাক্কা না দিলে কি কাজ হয় না? নাকি প্রত্যেকটা কাজের জন্য ছাত্র-জনতাকে নতুন করে মাঠে নামতে হবে?”

এর আগে বিকেলে ওই বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জি এম কাদের। এ সময় ‘অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দিতে পারবে না, তাদের সে ইচ্ছা ও ক্ষমতা নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত জাতীয় পার্টিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকার করছে না সরকার। অথচ যে দলটি নিবন্ধন পায়নি, তারা সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। সরকার পৃথকীকরণ নীতি পালন করছে। দেশের বৃহৎ অংশকে তারা সব রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে কোণঠাসা করছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইয়াসির, আজমল হোসেন লেবু, জেলা যুবসংহতির সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জি এম কাদের রংপুরে অবস্থান করার খবরে ক্ষুব্ধ হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। রাত ৮টার দিকে জাপা চেয়ারম্যানকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, রাত পৌনে ৯টার দিকে রংপুর প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কাদেরের বাসভবনে হামলা চালান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতাকর্মীরা।

পরে তারা সেখান থেকে ফিরে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলার খবরে স্কাই ভিউতে ছুটে যান জাতীয় পার্টির নেতারা। রাত ১০টার দিকেও তারা সেখানে অবস্থান করছিলেন। সেখানে থাকা জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটির সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘হামলার সময় জি এম কাদের বাসায়ই ছিলেন। তিনি অক্ষত আছেন। হামলাকারীরা অতর্কিত বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে।’ বাসার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত জানাতে পারেননি তিনি।হামলার ঘটনায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীর মুখোমুখি অবস্থানে নগরে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলার আহ্বায়ক আল ইমরাম বলেন, ‘শুনেছি আমাদের লোকজন হামলা চালিয়েছে।’ এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মজিদ আলী বলেন, জি এম কাদেরের বাসার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।