
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আইএমএফের ঋণ শর্ত পূরণে আজ থেকে বাজারভিত্তিক ডলার বিনিময় হার চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার (১৪ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
কিন্তু এর কিছুদিন আগেই অর্থ উপদেষ্টা আইএমএফ এর শর্ত না মানার কথা বলেদছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি ডলারের বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবেনা,পাকিস্তানের মতো ডলারের রেট ২০০-৩০০৳ চলে যাবে।’
আইএমএফ এর ঋণ পাওয়ার জন্য সরকার কোনো ধরণের শর্ত মানবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই তিনি ভোল পাল্টালেন। দেশের অর্থনীতিতে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবীদরা। খোদ অর্থ উপদেষ্টাই আশঙ্কা করেছিলেন এরকম শর্ত মানলে ডলার রেট ২০০টার উপরে চলে যেতে পারে। এখন দেখার বিষয় ডলারের বিনিময় মীল্য কততে গিয়ে ঠেকে।
গভর্নর বলেন, ‘বাজারভিত্তিক ডলার রেট চালুর জন্য আমরা অপেক্ষা করেছি। এখন এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সময় এসেছে। তবে এর মানে এই নয় যে যেকোনও দামে ডলার কেনাবেচা হবে। বিদ্যমান হারের আশপাশেই বিনিময় হার থাকবে।’তিনি আরও বলেন, ‘ডলারের বিনিময় হার বাংলাদেশ নিজের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও নীতিমালার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে। অন্য দেশের কথায় বা জল্পনায় রেট নির্ধারণ হবে না। বর্তমানে বাজারে ডলারের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।’
ড. আহসান জানান, আইএমএফ ঋণের পাশাপাশি জুন মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আইএমএফসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক দাতা সংস্থা থেকে বাংলাদেশ মোট ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাবে। এর মধ্যে আইএমএফ ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে।তিনি আরও বলেন, ‘আজকের বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের নীতিমালা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বড় অঙ্কের বৈদেশিক লেনদেনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ মে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে আইএমএফের সঙ্গে বিনিময় হারে নমনীয়তা আনার বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছে বাংলাদেশ। ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি বাস্তবায়নে জটিলতা থাকায় পূর্ববর্তী কিস্তি ছাড়ে বিলম্ব হয়। তবে নতুন উদ্যোগের ফলে আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের পথ এখন উন্মুক্ত হয়েছে।উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দেয়। এরই মধ্যে তিন কিস্তিতে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় হয়েছে। বাজারভিত্তিক রেট চালুর মাধ্যমে বাকি অর্থ ছাড় প্রক্রিয়ায় গতি আসবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।