Home / মুক্তচিন্তা / ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর গণহত্যায় জড়িত ছিল বিএনপি-জামায়াত

২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর গণহত্যায় জড়িত ছিল বিএনপি-জামায়াত

লেখক: আযম খান

এই বিষয়টি ২০০১ সালে হিন্দুদের টার্গেট করে বিএনপি-জামায়াতের যৌথ উদ্যোগে ঘটানো একটি জেনোসাইড নিয়ে। প্রথমে আমি দেখাবো কী কী উপায়ে জেনোসাইডটা ঘটেছিল। তারপরে দেখাবো কীভাবে এটা জাতিসংঘ প্রদত্ত জেনোসাইডের সংজ্ঞার সাথে মিলে যায়।

২০০১ সালে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামীর জোট ক্ষমতায় আসে। এরপর দেশব্যাপী সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক সহিংসতা, নির্যাতন, লুটপাট, ধর্ষণ এবং দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনাসমূহ ঘটে। এই সহিংসতার ঘটনার বেশ কিছু তথ্য বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং গবেষণামূলক প্রতিবেদনে নথিভুক্ত রয়েছে।

সহিংসতার ধরন:

১. ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনঅনেক হিন্দু নারী ও কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের ঘটনা অনেক সময় গোষ্ঠীগতভাবে সংঘটিত হয়। ভুক্তভোগীরা মামলা করতে গেলে পুলিশ সহায়তা করতে অস্বীকৃতি জানায় বা মামলা নিতে অস্বীকার করে।

২. লুটপাট ও ঘরবাড়ি ধ্বংসহিন্দুদের ঘরবাড়ি, দোকান ও মন্দিরে হামলা, আগুন দেয়া, সম্পদ লুটপাট করা হয়। অনেক জায়গায় হিন্দুদের বাড়িঘরে ‘জায়গা খালি করো’ ধরনের হুমকি লিখে রেখে যাওয়া হয়।

৩. হত্যা ও শারীরিক নির্যাতনহিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক সদস্যকে হত্যা করা হয় বা মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান।

৪. দেশত্যাগ ও অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতিনিরাপত্তার অভাবে হাজার হাজার হিন্দু পরিবার তাদের গ্রাম ছেড়ে আশেপাশের বড় শহর বা পার্শ্ববর্তী ভারত অভিমুখে পালাতে বাধ্য হয়।

এখন দেখা যাক জাতিসংঘের জেনোসাইডের সংজ্ঞা কী বলে। জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের Convention on the Prevention and Punishment of the Crime of Genocide (Genocide Convention) অনুযায়ী, জেনোসাইড হলো:

Any of the following acts committed with intent to destroy, in whole or in part, a national, ethnical, racial or religious group, as such:” Killing members of the group;

Causing serious bodily or mental harm to members of the group; Deliberately inflicting conditions of life calculated to bring about its physical destruction in whole or in part; imposing measures intended to prevent births within the group; Forcibly transferring children of the group to another group.

২০০১ সালের ঘটনার প্রেক্ষাপটে জেনোসাইডের শর্তগুলো যেভাবে মিলে যায়:

১. “Intent to destroy, in whole or in part” — উদ্দেশ্য কি ছিল নিশ্চিহ্ন করা?বহু ঘটনায় দেখা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়কে ভয় দেখিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বাড়িঘর লুট, ধর্ষণ, হত্যা—এসব অপরাধ ছিল পরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এতে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নিঃশেষ করার উদ্দেশ্য বোঝা যায় — অন্তত আংশিকভাবে।

২. Killing and serious harm (ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন) — কি ঘটেছে?হ্যাঁ, ঘটেছে। সংবাদপত্র, মানবাধিকার সংস্থা, এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে বহু হত্যাকাণ্ড ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের তথ্য পাওয়া যায়।

৩. Deliberate infliction of life-threatening conditions — কি ঘটেছে?অনেক হিন্দু পরিবারকে ঘরছাড়া করে, তাদের জীবনযাপন অনিরাপদ করে তোলা হয়েছিল। খাদ্য, আশ্রয়, নিরাপত্তা—সব কিছু থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।অর্থাৎ এটা পরিষ্কার যে, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে সে সময়ে একটা জেনোসাইড ঘটেছিল। জামায়াতের এটা দ্বিতীয় জেনোসাইড। আরেক অর্থে, জেনোসাইডের অপরাধে ভবিষ্যতে বিএনপিরও বিচার করা যাবে। কারণ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক দুই আইনেই জেনোসাইডের অপরাধ কখনো তামাদি হয় না।

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *