
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি কল রেকর্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে এই কল রেকর্ডটির সময়কাল ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন।বিবিসির দাবির কেন্দ্রে রয়েছে একটি ভয়েস রেকর্ড, যেটি তারা “বিশ্লেষণ করে” শেখ হাসিনার কণ্ঠ বলে উল্লেখ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি জুলাই-আগস্ট মাসে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ২০১৬ সালের হলি আর্টিজান হামলার সময়ের নির্দেশনা—যেখানে জঙ্গিদের গুলি করে দমন করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে অবস্থিত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসআইয়ের সদস্যরা ভয়াবহ হামলা চালায়। সেই হামলায় নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের গুলি করে নির্মূল করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নেওয়া এই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত বহু প্রাণ রক্ষা করে।
তবে আজ যে রেকর্ড নিয়ে বিবিসি প্রতিবেদন করেছে, সেটিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে—প্রকাশ করা হয়েছে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের রাজনৈতিক আন্দোলন দমন করার নির্দেশ হিসেবে। এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অনেকে দাবি করছেন, এটি হয় পূর্বের রেকর্ড নয়তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্বারা তৈরি ভয়েস ক্লিপ।বিবিসির প্রতিবেদনে যে ফরেনসিক বিশ্লেষণের কথা বলা হয়েছে, তার গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, তারা স্বীকার করেছে শতভাগ নিশ্চিত নয় যে এটি শেখ হাসিনারই কণ্ঠ। এছাড়া তারা যেই ‘নিরপেক্ষ সংস্থা’র মাধ্যমে যাচাই করেছে, তার নাম বা প্রামাণিকতা স্পষ্ট করা হয়নি। সময়কাল, প্রেক্ষাপট—কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়।
এই প্রতিবেদন ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দলটির শীর্ষ নেতা ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন:”প্রতিবেদনটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অবৈধ সরকারের স্বার্থরক্ষা হয়, শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ফেলা যায় এবং একটি রিগড ট্রায়ালের মাধ্যমে তাঁকে দোষী প্রমাণ করা যায়। আমরা জনগণ হিসেবে চাই সত্যের প্রকাশ, পক্ষপাতহীন তদন্ত এবং দেশবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান। বিচারব্যবস্থাকে যেন মিডিয়া ট্রায়ালের নামে তামাশায় পরিণত না করা হয়।”
মানবাধিকারকর্মী ও আওয়ামী লীগ নেতা সুশান্ত দাশ গুপ্ত বলেন,”BBC World Service সম্প্রতি যে তথাকথিত ‘তদন্তমূলক ভিডিও’ প্রকাশ করেছে, তা পক্ষপাতদুষ্ট, ভ্রান্ত তথ্যপূর্ণ এবং বিবিসির নিজস্ব নীতিমালারও লঙ্ঘন। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে তারা একটি পূর্বের কল রেকর্ডকে অপব্যাখ্যা করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।”তিনি এই মর্মে বিবিসিকে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রও দাখিল করেছেন।বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের সংবাদ “ক্লিকবেইট জার্নালিজম”-এর উদাহরণ, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিবেশিত হয়েছে এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টা