Home / রাজনীতি / সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে পদে পদে বাধা হলেও বৈষম্যবিরোধী নেতাদের রাজসিক যাতায়াত!

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে পদে পদে বাধা হলেও বৈষম্যবিরোধী নেতাদের রাজসিক যাতায়াত!

সোমবার জাতীয় বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ দলিল সংগ্রহ করতে সচিবালয়ে যান বিভিন্ন পেশাদার জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সংবাদকর্মীরা। তারা নিজেদের সরকারি স্বীকৃত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেখানো সত্ত্বেও সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয় নিরাপত্তারক্ষীরা। অথচ তাদের সামনেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র (বৈছা) আন্দোলন-এর কর্মী পরিচয়ে এক তরুণ নির্বিঘ্নে প্রবেশ করেন।

এই ঘটনাটি সচিবালয়ের প্রবেশ-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান পক্ষপাত, বৈষম্য এবং তথাকথিত “ছাত্র আন্দোলনের” নামে এক শ্রেণির সুবিধাভোগীদের অবারিত সুযোগ নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছে।সচিবালয়ে সরকারি নীতিনির্ধারণ, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের সূতিকাগার। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে আজ নানামুখী বাধা। পক্ষান্তরে, ছাত্র সংগঠনের পরিচয়ে বৈছা নেতারা সেখানে অবাধে যাতায়াত করছেন, যা প্রশ্ন তুলেছে প্রবেশ-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা ও এর পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে।

সচিবালয়ে নিয়মিত রিপোর্টিংয়ের দায়িত্বে থাকা অনেক সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে তালিকাভুক্তির দীর্ঘসূত্রিতা, পাস ইস্যুতে হয়রানি, পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও নানা অজুহাতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিয়ে উপরের নির্দেশনা অনেক কঠোর। ওদের প্রবেশ করতে দিলে উপর থেকে চাপ আসে। কিন্তু কিছু এনজিও-ধর্মী সংগঠন বা ছাত্র সংগঠনের লোকজনকে স্পেশাল অনুমতিতে ঢুকতে দিতে বলা হয়।’

বৈছা নেতাদের নির্ভরযোগ্য “তদবির” চ্যানেলএকাধিক সূত্রে জানা গেছে, বৈছা নামে পরিচিত এই সংগঠনটি সাম্প্রতিক সময়ে সচিবালয়ে একাধিক মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে নিয়মিত যাতায়াত করছে। তাদের কিছু নেতা ছাত্র পরিচয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে ‘বৈষম্য প্রতিরোধ’, ‘নীতিগত পরামর্শ’ কিংবা ‘সহযোগিতা’ চেয়ে বিভিন্ন চিঠি দিচ্ছেন। তবে ভেতরের একাধিক সূত্র বলছে, প্রকৃতপক্ষে এসব যোগাযোগের আড়ালে চলছে “তদবির” ও সুবিধা বাণিজ্য।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচিবালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদায়র এক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ওরা মূলত নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করা, এনজিও অনুমোদন, প্রশিক্ষণ প্রকল্পে নাম অন্তর্ভুক্তির মতো কাজে তদবির করে। কিছু ক্ষেত্রে লবিং করে আর্থিক সুবিধাও নেয় বলে শুনেছি।’

প্রবেশ নীতিতে বৈষম্যের প্রশ্নসচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় থাকা ব্যক্তিরা অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন, প্রবেশ তালিকায় কারা থাকবেন তা অনেক সময় প্রশাসনের “উপরে মহলের” সিদ্ধান্তে হয়। ফলে সাংবাদিকরা যেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সীমাবদ্ধ হচ্ছেন, সেখানে একটি ছাত্র সংগঠনের নেতারা নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারছেন—এটি স্বচ্ছতা ও ন্যায়সংগত প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রশ্ন তোলে।

সাংবাদিকদের একজন বলেন, ‘যারা প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে সচিবালয়ে যান, তাদের আটকানো হচ্ছে। আর যারা তদবিরের নামে সুবিধা নিতে আসে, তাদের জন্য সব দরজা খোলা। এটা শুধু অনিয়ম নয়, প্রশাসনিক দুর্নীতির আভাসও।’বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণের জানার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের পেশাগত কর্মকাণ্ডে বাধা দিয়ে যদি তদবির ও প্রভাব খাটানোর চ্যানেল খুলে রাখা হয়, তবে তা গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সচিবালয়ের প্রবেশ নীতি ও কার্যকারিতা পুনর্মূল্যায়ন এখন সময়ের দাবি।

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *