Home / রাজনীতি / মাসব্যাপি আ’লীগের কর্মসূচি ঘোষণা,ঠেকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার-কার্যক্রমে বাধা দেওয়ায় জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রকাশ

মাসব্যাপি আ’লীগের কর্মসূচি ঘোষণা,ঠেকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার-কার্যক্রমে বাধা দেওয়ায় জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রকাশ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত হলেও ২০২৫ সালের ১০ মে থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া এবং আগস্ট ২০২৪-এ ক্ষমতা জবরদখল করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দলটি আজ থেকে এক মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিতর্কিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সারাদেশে ৬৬টি স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে দলটির পুনরুত্থানের প্রচেষ্টার অংশ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে দলটি ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিযোগ করছে, যা ২০১০ সালে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংসতার বিচারের জন্য গঠিত হয়েছিল। অনেক পর্যবেক্ষক এই ট্রাইব্যুনালকে বিরোধী দলের নেতাদের টার্গেট করার রাজনৈতিক হাতিয়ার ও ক্যাঙারু কোর্ট হিসেবে বিবেচনা করেন।

মিছিলের স্থানসমূহ:

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সারাদেশে ৬৬টি স্থানে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থানের তালিকা দেওয়া হলো:

ঢাকা মহানগর:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাঁটাবন পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল।আসাদগেট থেকে ধানমন্ডি-৩২ হয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে মিছিল।মিরপুর-১০, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, গুলিস্তান, পল্টন, নয়াপল্টন, এবং জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় পৃথক মিছিল।

সারাদেশঃ

চট্টগ্রাম: চেরাগী পাহাড়, নিউমার্কেট, জামালখান, কোতোয়ালি, এবং হালিশহরে মিছিল।

রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, কোর্ট স্টেশন, সাহেব বাজার এবং মালোপাড়ায় বিক্ষোভ।

খুলনা: খুলনা শহরের দৌলতপুর, খালিশপুর, ফুলবাড়িগেট এবং রয়েল মোড়ে মিছিল।

বরিশাল: সদর রোড, নথুল্লাবাদ, কাউনিয়া এবং বান্দরোড এলাকায় বিক্ষোভ।

সিলেট: আম্বরখানা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার এবং চৌহাট্টায় মিছিল।

রংপুর: রংপুর কলেজ রোড, স্টেশন রোড এবং গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে সমাবেশ ও মিছিল।

ময়মনসিংহ: টাউন হল মোড়, গাঙ্গিনারপাড়, এবং চরপাড়ায় বিক্ষোভ। এছাড়াও আরো অন্যান্য জেলা শহর, উপজেলা, ইউনিয়নে বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিবাদী মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, কিছু কিছু স্থানে মিছিলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন নেতাকর্মীরা, এবং কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

আওয়ামী লীগের দাবি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া ‘প্রহসনমূলক’ এবং এটি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারা আরও অভিযোগ করেছে যে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় রয়েছে এবং জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই শাসন চালাচ্ছে। দলটি তাদের এক মাসব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে এই দাবিগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছে।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর ২০২৫ সালের ১০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির নেতাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ১২ মে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। এই প্রেক্ষাপটে দলটির এই বিক্ষোভ কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচিকে মিশ্র দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি দলটির রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার প্রচেষ্টা, আবার কেউ কেউ এটিকে আইনের শাসন ও বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। এই বিক্ষোভ দমনে পুলিশকে স্পক্রিয় হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৯তম অধিবেশনে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক সোমবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন এবং রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণের সাম্প্রতিক আইন সংশোধনীর সমালোচনা করেছেন।

তুর্ক বলেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে অগ্রগতি দেখে আমি উৎসাহিত। কিন্তু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধকরণের আইন সংশোধনী সংগঠন, মতপ্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতাকে সীমিত করে।” তিনি বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য দ্রুত চুক্তির আশাও ব্যক্ত করেন।

তবে, তুর্কের বক্তব্যে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সংলাপে অংশগ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি, যদিও তিনি দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধের সমালোচনা করেছেন। এর বিপরীতে, জাতিসংঘের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস গত ৪ জুন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে রাজনৈতিক দলের নয়, সব জনগণের অংশগ্রহণ।”

এই বক্তব্য দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের তীব্র নিন্দার পর। লুইসের বক্তব্যের দুই সপ্তাহ পর তুর্কের এই মন্তব্য এসেছে।এর আগে গত জানুয়ারিতে বিবিসের এক সাক্ষাতকারে তুর্ক বলেছিলেন, গত জুলাইয়ের আন্দোলনে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ থেকে নিবৃত্ত করেছিলেন, যা বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছিল। এর প্রায় ৫ মাস পরে প্রথম, মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশ বিষয়ে কথা বললেন ভলকার তুর্ক।

অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে, তুর্ক বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ ও উচ্চ শুল্ক আরোপের প্রভাব নিয়ে সতর্ক করে বলেন, “এটি বাংলাদেশের মতো রপ্তানিমুখী দেশগুলোর জন্য বিধ্বংসী হতে পারে। উচ্চ শুল্ক স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও পুষ্টিকর খাদ্যের সুযোগ কমিয়ে দেবে এবং নিম্ন-বেতনের উৎপাদন খাতে কর্মরত নারীদের ওপর লিঙ্গ বৈষম্যের প্রভাব বাড়াবে।”তিনি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জনগণের অরক্ষিত অবস্থা এবং দরিদ্রতম মানুষদের প্রতি “অগ্রাধিকারহীন ক্ষতি”র প্রবণতার নিন্দা করেন। তুর্ক বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও মানবাধিকার রক্ষায় সংলাপ ও সংস্কারের মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানান।

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *