Home / অন্যান্য / জাতীয় / বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় মিয়ানমার বর্ডারে অপেক্ষা করছে আরও এক লাখ রোহিঙ্গা

বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় মিয়ানমার বর্ডারে অপেক্ষা করছে আরও এক লাখ রোহিঙ্গা

গত ১৮ মাসে বাংলাদেশে ঢুকেছে দেড় লাখ রোহিঙ্গা। সীমান্তে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে আরও এক লাখ। এদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) থেকে কক্সবাজার উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাথাপিছু মাসিক খাদ্যসহায়তা ১২ মার্কিন ডলার এবং নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের জন্য ১৩ ডলার করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বহাল থাকবে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে বরাদ্দ নতুন করে নির্ধারণ করার কথা রয়েছে। ফলে এই বরাদ্দ যাতে না কমে সেই চেষ্টাও চলছে। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজছে সরকার। যদিও ড. ইউনূস বলেছিলেন রোহিঙ্গারা আগামী ঈদ তাদের পরিবারের সাথে মিয়ানমারে পালন করবে। উলটো মিয়ানমারে বাকি থাকা রোহিঙ্গারাও এখন বাংলাদেশে আসার পথে।

রোহিঙ্গা-সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও টেকসই সমাধানের পথ খুঁজতে কক্সবাজারে আজ রোববার বসছে স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ। রোহিঙ্গা ইস্যু বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দপ্তর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ :টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এ আয়োজনকে বলা হচ্ছে আসন্ন নিউ ইয়র্ক সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক সংলাপ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে উচ্চপর্যায়ের ঐ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আরও একটি আন্তর্জাতিক সংলাপ এ বছরের শেষে দোহায় অনুষ্ঠিত হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিক্ষাবিদ এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও যুবকদের অভিজ্ঞতা ও মতামত সংলাপে বিশেষভাবে তুলে ধরা হবে, যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরাসরি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে পারে। সংলাপের দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ সোমবার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২৬ আগস্ট সংলাপের অংশ হিসেবে অংশগ্রহণকারীরা সরাসরি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশগুলোই আগামী সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে প্রস্তাবনা হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।

রাখাইনে এখনো চলছে সংঘাত :মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাখাইন রাজ্যের দখলদার সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় ঐসব এলাকার রোহিঙ্গারা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকে নৌকায় নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন। সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তে নাফ নদীর ওপারে রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি গ্রামে গোলাগুলি শুরু হয়। থেমে থেমে সেই গোলাগুলি গতকাল শনিবার ভোর ৫টা পর্যন্ত চলতে থাকে। ওপারের গুলির শব্দ এপারের (হোয়াইক্যং) লোকজন শুনতে পেয়েছে।

এর আগে ১৯ আগস্ট রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যের ‘নারকেল বাগিচা’ এলাকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আরাকান আর্মির দখলে থাকা দুটি সীমান্তচৌকির দখলে নিতে অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী এ হামলা চালায় বলে জানা গেছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার টেকনাফ বিজিবি নাফ নদীতে ৬২ জন রোহিঙ্গাকে প্রতিহত করেছে জানিয়ে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ওপারে হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও স্থলসীমান্তে বিজিবি তৎপর রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালয়েশিয়া সফরের সময় সে দেশের জাতীয় সংবাদ সংস্থা বারনামার সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গত ১৮ মাসেই দেড় লাখ নতুন রোহিঙ্গা দেশে এসেছেন। এরই মধ্যে দেশে থাকা ১২ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তারা। এ সমস্যা ক্রমেই আরও জটিল হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা, যুক্তরাষ্ট্র তাদের (রোহিঙ্গা শরণার্থী) দেখভালের সব তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে। তাই এটি আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। দীর্ঘস্থায়ী এ মানবিক সংকট শুধু বাংলাদেশকেই প্রভাবিত করছে না, বরং মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি আসিয়ান সদস্য দেশকে প্রভাবিত করছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাখাইনে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের (এনটিএফ) এক সভায় বিষয়টি জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম।

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *