
কোরবানির ঈদ ঘিরে দাম কমে আসায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।প্রতি বছর এ সময়ে রাজশাহীর আমের বাজার থাকে জমজমাট। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এবার একই সময়ে দাম মণপ্রতি ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত কম। কোরবানির ঈদ ঘিরে দাম কমে আসায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
চলতি সপ্তাহে আমের দাম অনেক কম ছিল। তবু ক্রেতা নেই।আমচাষি, কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার রাজশাহীতে আমের উৎপাদন বেশি। আমের যে পরিমাণ মুকুল এসেছিল, বেশিরভাগই থেকেছে। ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হয়নি। সামনে কোরবানির ঈদ পড়াতে বাজারে আমের দাম কিছুটা কমেছে।চলতি বছর রাজশাহীতে ১৯,৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ১৯,৬০২ হেক্টর জমিতে। সে বছর ছিল অফ ইয়ার। এজন্য এবার ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে দেখা মিলেছে একসঙ্গে কয়েক জাতের।
রাজশাহীর সর্ববৃহৎ আমের বাজার বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে। পুঠিয়া উপজেলা হলেও দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট, পবা, মোহনপুর, বাগমারাসহ সব উপজেলার আম মূলত বেচাকেনা হয় বানেশ্বর হাটে। এখানে রয়েছে কয়েকটি বড় মোকাম। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে আম।বানেশ্বর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গোপালভোগের শেষ সময়ে বিক্রি হচ্ছে ১,৮০০-২,০০০ টাকা মণ। গত বছরের শেষ সময়ে বিক্রি হয়েছিল ২,৮০০-৩,২০০ টাকায়। গুটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ। গত বছরে দাম ছিল ১,৬০০ থেকে ১,৮০০ টাকা। লক্ষণভোগ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ, রাণীপ্রসাদ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১,২০০ টাকা মণ। এই দুই জাতের আম গত বছরে বিক্রি হয়েছে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ হাজার মণ।
এরই মধ্যে বাজারে উঠেছে হিমসাগর। এবার এই আমের দামে ধস নেমেছে। গত বছর শুরু হয়েছিল ২,৬০০ টাকা মণ দিয়ে। এবার শুরু হয়েছে ১,৬০০ টাকা মণ দিয়ে। তবে সময়ের আগেই পাওয়া যাচ্ছে ল্যাংড়া। এই আম প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় ছিল ১০ জুন। তার আগেই বাজারে চলে এসেছে। বিক্রি হচ্ছে ১,৪০০ থেকে ১,৬০০ টাকা মণ। গত বছর দাম শুরু হয়েছিল ২,৪০০ টাকায়। ফজলি ও আম্রপালি আসবে ১৫ জুন।বানেশ্বর বাজারের আমের আড়তদার মো. আসাদুল্লাহ বলেন, “গত দুই তিন বছরের মধ্যে এবার আমের দাম কম। কোরবানি ঈদে সেভাবে বিক্রি হবে না। এই সপ্তাহেও বিক্রি কমে গেছে।
আশা করা যায়, ঈদের সপ্তাহখানেক পর আবারও বিক্রি শুরু হতে পারে। তখন দাম কিছুটা হলেও বাড়বে।”বাঘা উপজেলা থেকে আম বিক্রি করতে এসেছেন আলাউদ্দিন। তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আমের রঙ আরও সুন্দর হয়েছে। আকারও বেশ বড় আছে। কিন্তু এবার দাম নেই বললেই চলে। গোপালভোগের পাঁচটি গাছের ৬০ মণ এনেছি। গত বছরে তিন হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছিলাম। এবার তা দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। ইদের পর ল্যাংড়া আম পাড়বো। তখন হয়তো দাম আরও কমবে।”
বানেশ্বর হাটের ইজারাদার জাকির হোসেন সরকার বলেন, “এ বছর আমের উৎপাদন ভালো। কিন্তু কোরবানি ঈদের কারণে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এর আগে টানা বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছিল চাষিদের। গুটি জাতের আম ৩০০ টাকা মণে বিক্রি করতে হয়েছে। এতে চাষিদের আরও ক্ষতি হবে। ঈদের কারণে রাজশাহীর বাইরের ব্যবসায়ীরা আম নিতে চাচ্ছেন না। কারণ এই সময়ে ঢাকায় কেউ থাকবে না। সবাই গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবে। এজন্য চাহিদা নেই। ঈদের পর হয়তো দাম বাড়তে পারে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক সাবিনা বেগম ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “এবার রাজশাহীতে ৯৮% গাছে মুকুল এসেছিল। আবহাওয়া ভালো থাকায় মুকুলের ক্ষতি হয়নি। শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় কিছু গুটি ঝড়েছে। আমের বেশিরভাগই টিকেছে। উৎপাদনও তাই বেড়েছে। এবার বেশ ফলন হয়েছে। আমের রঙ ও আকারও ঠিক আছে। তবে আগেরবারের চেয়ে এবার দাম কিছুটা কম।”