Home / অর্থনীতি / জুলাইয়ের পর অর্থ পাচারে ভয়াবহ বৃদ্ধি: সন্দেহজনক লেনদেন ৭৮.৭৫% বেড়েছে, বিএফআইইউর প্রতিবেদন

জুলাইয়ের পর অর্থ পাচারে ভয়াবহ বৃদ্ধি: সন্দেহজনক লেনদেন ৭৮.৭৫% বেড়েছে, বিএফআইইউর প্রতিবেদন

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থ পাচার ও সন্দেহজনক লেনদেনের পরিমাণ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১৫ মে পর্যন্ত ব্যাংক, বীমা কোম্পানিসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সন্দেহজনক লেনদেনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৩০টি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৩৪৫টি, অর্থাৎ মাত্র সাড়ে ১০ মাসে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৭৮.৭৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) জানিয়েছে, জুলাই বিপ্লবের পর থেকে এ ধরনের রিপোর্টিং ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। উপস্থিত ছিলেন বিএফআইইউর প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক মো. কাওছার মতিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান, পরিচালক মহুয়া মহসীনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে ১৫ হাজার ৯৯১টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৩০টি, পুঁজিবাজারে ৩টি, প্রবাসীদের মাধ্যমে ১ হাজার ১৯১টি এবং অন্যান্য মাধ্যমে ৩০টি। এ সময়ে বিএফআইইউ বিভিন্ন অনিয়ম তদন্তের জন্য ১ হাজার ২২০টি তথ্য অন্যান্য সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে দুদককে ৮২টি, সিআইডিকে ৪৬৬টি, পুলিশের অন্যান্য সংস্থাকে ২৬৮টি, বাংলাদেশ ব্যাংককে ৩১টি, এনবিআরকে ৮২টি এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাকে ২৯১টি তথ্য দেওয়া হয়েছে।

বিএফআইইউর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৮টি। আগের অর্থবছরগুলোতে এই সংখ্যা ছিল অনেক কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১৪ হাজার ১০৬টি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮ হাজার ৫৭১টি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ হাজার ২৮০টি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৭৫টি।বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৮-২০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ কোটি থেকে ২ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে।

একজন ব্যক্তি ৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন, যা আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ হয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এসব অর্থ পাচার করা হয়েছে।” তিনি জানান, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে। ইতোমধ্যে বিদেশে একজনের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে, এবং আরও সম্পদ জব্দের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য পাচারকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আদালতের বাইরে অর্থ উদ্ধার করা, কাউকে হয়রানি বা ব্যবসা বন্ধ করা নয়।”

বিএফআইইউর প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলাম বলেন, “অর্থ পাচার ও হুন্ডি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও লেনদেনের ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।” তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনায় বিএফআইইউ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, তদন্ত সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। বিশ্বব্যাংকের এসটিএআর, যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসডোজ, আইএসিসিসি ও আইসিএআরের সহায়তায় এবং বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে অর্থ পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল।বিএফআইইউর পরিচালক মুহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, “অর্থ পাচার ধরা ও উদ্ধার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। জুলাইয়ের পর থেকে আমাদের কাজ কয়েকগুণ বেড়েছে। সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্ট উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।”এই অর্থ পাচার ও সন্দেহজনক লেনদেনের ঊর্ধ্বগতি দেশের অর্থনীতির জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। বিএফআইইউ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং আইনি সংস্কারের মাধ্যমে এই অর্থ ফেরত আনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *