Home / অন্যান্য / জাতীয় / চালের দামে দিশাহারা ভোক্তা,সেঞ্চুরির পথে বেশিরভাগ সবজি

চালের দামে দিশাহারা ভোক্তা,সেঞ্চুরির পথে বেশিরভাগ সবজি

চালের বাজারে অস্থিরতা চলছেই। রাজধানীর খুচরা বাজারে চিকন চালের (মিনিকেট) দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি ও মোটা চালও কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।চট্টগ্রামেও চালের বাজার অস্থির।

৫০ কেজির বস্তায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। লাগামহীন এই মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজ গতকাল বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেছে।এদিকে সবজিতেও স্বস্তি নেই। প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।

এতে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন ভোক্তা।ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল পর্যায়ে চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এর প্রভাবে খুচরা ও পাইকারিতেও দফায় দফায় দাম বাড়ছে। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, সবজির মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বাজারে সরবরাহ কমেছে, যার প্রভাব পড়ছে দামে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল মানভেদে প্রতি কেজি ৮২ থেকে ৯০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৭২ থেকে ৮২ টাকা। ব্রি-২৮ ও পাইজাম চাল কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।কারওয়ান বাজারের মেসার্স মান্নান রাইস এজেন্সির মালিক আব্দুল মান্নান তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই ভরা মৌসুমে মিলাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর মিনিকেট চাল কেজিতে ১৪ টাকা বেশি।

এক বছরে মোটা চাল ব্রি-২৮ প্রতি কেজিতে আট টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল চালও কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মিলারদের কারসাজিতে দাম বেড়েছে। সরকারকে এখনই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।’ কারওয়ান বাজারের মেসার্স ঢাকা রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. সায়েম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদের পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকন চালের দাম বস্তায় ৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন মিলাররা। মোটা চালের দাম বস্তায় ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’

গতকাল বাড্ডা, রামপুরা, জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, করলা, বরবটি ও কাকরোল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ১০০ টাকা। টমেটো মানভেদে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৭০, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা।জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মিলন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় আড়তে দাম বাড়তি।’

রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি মানভেদে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১২০ টাকা।বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি মানভেদে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, দেশি আদা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, দেশি রসুন প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, দেশি মসুর ডাল (চিকন দানা) ১৪০ টাকা, আমদানি করা মসুর ডাল (মোটা দানা) ১০০ থেকে ১২০ টাকা।

চট্টগ্রামেও দাম বেড়েছে, প্রতিবাদে মানববন্ধন : চট্টগ্রামে চালের বড় পাইকারি আড়ত পাহাড়তলী ও চাক্তাই চালপট্টিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোরবানির ঈদের সময় মোটা চাল হিসেবে পরিচিত গুটি ও স্বর্ণা ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৯০০ টাকা। এখন ১০০ টাকা দাম বেড়ে সেটি দুই হাজার টাকা। জিরাশাইল চাল ২৫ কেজির বস্তা ছিল এক হাজার ৯৫০ টাকা, সেটি ২০০ টাকা বেড়ে এখন দুই হাজার ১৫০ টাকা। বেতি আতপ চাল ৫০ কেজির বস্তা এখন তিন হাজার টাকা। কোরবানির আগে বস্তা বিক্রি হয়েছিল ১৫০ টাকা কমে। মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা তিন হাজার ৭০০ টাকা। জুনে দাম ৩০০ টাকা কম ছিল।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, বর্তমানে গাড়িভাড়া বেড়েছে, ধানের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া চালকলে খরচ বেশি পড়ায় দামে প্রভাব পড়েছে।চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, আগে যেখানে পরিবহন খরচ ২০ হাজার টাকা ছিল, সেখানে এখন ৩০ হাজার টাকা। মাঝে প্রায় ১৫ দিন ঈদের কারণে চালকল বন্ধ ছিল। তখন মিলে শ্রমিকরা কাজ করেননি। এর প্রভাব চালের সরবরাহ পড়েছে। ফলে সব মিলিয়ে দাম বেড়েছে।চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, হঠাৎ করে চালের সরবরাহ কমার কারণে দাম বেড়েছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চাষিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে চাল কিনে নিচ্ছে। এতে মিল মালিকরা ধান পাচ্ছেন না।

চালের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’—স্লোগানকে সামনে রেখে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজ। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান প্রেস ক্লাব চত্বরে এই মানববন্ধন হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ও সংগঠনের প্রতিনিধি অংশ নেন। মানববন্ধনে যৌথভাবে অংশ নেয় বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম, প্রাণ ও আইএসডিই বাংলাদেশ।দিনাজপুরে বস্তায় বেড়েছে ৫০০ টাকা : দিনাজপুরে ৫০ কেজির চালের বস্তায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। জুন মাসে চালের দাম ৫০ কেজির বস্তায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়ে যায়। পরে অবশ্য সামান্য দাম কমেছে।

দিনাজপুর শহরের সবচেয়ে বড় চালের মোকাম বাহাদুর বাজারে মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা তিন হাজার ৩০০ থেকে বেড়ে তিন হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ২৫০ থেকে তিন হাজার ৭০০ টাকা। বিআর ২৭ জাতের চাল ৫০ কেজির বস্তা বেড়ে তিন হাজার ৫০ থেকে তিন হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৯৫০ থেকে তিন হাজার ২৫০ টাকায়।উপশহর খেড়পট্টি থেকে চাল কিনতে আসা রিকশাচালক সিদ্দিক হোসেন বলেন, মোটা চালের দাম প্রতি কেজিতে ছয় থেকে আট টাকা বাড়ায় সবজি কিনতে কষ্ট হচ্ছে।

বাহাদুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী সৌরভ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আশরাফ আলী ও এরশাদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী এরশাদ হোসেন বলেন, চালের দাম হঠাৎ করে মিল গেটে বেড়ে যায়। তাই আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এখন কিছুটা কম দামে পাচ্ছি। ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ৭০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি করছি।বাংলাদেশ মেজর অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, বাজারে ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে।

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *