
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে এই দেশে কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি, যা হয়েছে সেটা ছিল রাজনৈতিক বিরোধ—এমন যুক্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনাসহ দুই আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমির হোসেন।তবে প্রসিকিউশন বলছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যা, এ সব কিছুই নির্ধারণ হবে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হওয়ার পর।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার শুনানিতে অব্যাহতির আবেদনের কারণ হিসেবে আমির হোসেন ব্যাখ্যা করেছেন, ১৯৭৩ সালের আইনানুযায়ী যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য এই ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল।
কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে এই দেশে কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি উল্লেখ করে আমির হোসেন বলেন, ‘এখানে রাজনৈতিক যে পটপরিবর্তন, হিংসা, প্রতিহিংসা তার প্রেক্ষাপটে এ ঘটনা। অতএব যেহেতু কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি, অতএব যুদ্ধাপরাধ থেকে উদ্ভূত যেসব অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধ, সেটা এখানে সংঘটিত হয়নি।’
আমির হোসেনের শুনানির পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তার যুক্তিকে ‘ফ্ল্যাট ডিনায়াল’ বলে উল্লেখ করেন। পরে তিনি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আরজি জানান ট্রাইব্যুনালে।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারসহ তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আগামী ১০ জুলাই অভিযোগ গঠনের আদেশের দিন ঠিক করেন।এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল এ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত একমাত্র আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। ট্রাইব্যুনালের এজলাসে আসামিদের গারদখানায় উপস্থিত ছিলেন তিনি।
এর আগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে আইনি লড়াই করতে আমির হোসেনকে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে জুলাই-আগস্টে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চালানো গুলিতে প্রায় দেড় হাজার মানুষ মারা যান। আহত হন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। গত ১ জুন ওই সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সুনির্দিষ্ট ৫টি অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।পরে গত ১ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। ওই দিন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এ মামলায় শুনানি শেষ করেন।