
অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ও যমুনা সেতু সংযোগ সড়কে একাধিক গাড়ি বিকল হওয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার এলাকায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (৪ জুন) দিবাগত মাঝরাত থেকে যমুনা সেতুর টোল প্লাজা থেকে রাবনা পর্যন্ত এই ধীরগতি। এতে উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের খুব কষ্ট হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের বাসচালক সোনাচান মিয়া বলেন, ভোর রাত টাঙ্গাইলের নগরজালফৈ বাইপাস থেকে যান চলাচলে ধীরগতি দেখা দেয়। এলেঙ্গা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক আসতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে।এদিকে পুলিশ বলছে, মহাসড়কে যানজট নিরসনে তারা কাজ করছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট নিরসনের আশ্বাস তাদের।বৃহস্পতিবার (৫ জুন) মহাসড়কের এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শরীফ মিয়া জানান, যানজট থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে ধীরগতিতে যানবাহন চলছে।
চট্টগ্রাম নগরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আমিরুল ইসলামের বাড়ি চাঁদপুরে। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে আজ বৃহস্পতিবার তিনি বাড়ি যাচ্ছিলেন। বেলা আড়াইটায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছান। চাঁদপুরগামী বিশেষ ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন। ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল বেলা ৩টা ২০ মিনিটে। অথচ এটি ছেড়েছে ৪ টা ১২ মিনিটে, প্রায় ১ ঘণ্টা দেরিতে।
বিকেল ৪টার দিকে আমিরুল ইসলাম ট্রেনের একটি বগিতে দাঁড়িয়ে ১৭ মাস বয়সী ছেলে আরিফুল ইসলামকে বাতাস করছিলেন। তাঁর একমাত্র সন্তানকে কোলে নিয়ে ট্রেনের আসনে বসতে পেরেছেন স্ত্রী। আমিরুল ইসলাম আসন পাননি। ছেলেকে বাতাস করতে করতে এই বাবা বলেন, বগিতে ফ্যান নেই। গরমে ছেলেটা কাহিল হয়ে পড়েছে। ঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়লে এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
শুধু আমিরুল নয়, দেরিতে ট্রেন ছাড়ার কারণে তার মতো অনেক শিশুকেই ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেল। ট্রেনটির সব বগিতেই গাদাগাদি করে ঘরমুখী যাত্রীরা উঠেছিলেন।স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় ছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ আরাফাত। তিনি চট্টগ্রামের একটি শিপিং প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। থাকেন নগরের ইপিজেড এলাকায়। তাঁর বাড়িও চাঁদপুর সদরে। আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, ঝক্কিঝামেলা এড়াতে ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু স্টেশনে এসে ভোগান্তি পোহাতে হলো।
স্টেশনে কথা হয় মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে। তাঁর মেয়ের বয়স ৩ বছর। মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী সালমা হক বেশ ভোগান্তিতেই পড়েছিলেন। কোনোভাবেই মেয়েকে ট্রেনের ভেতর রাখা যাচ্ছিল না। পরে কোলে নিয়ে বাবা দাঁড়িয়ে ছিলেন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ফ্যানের নিচে।
একই অবস্থা লঞ্চগুলোতেও। যাত্রীদের উপচে পড়া ভীড়,সময়মতো লঞ্চ না ছাড়া,লঞ্চ না পাওয়া,টিকেটের দাম বৃদ্ধিসহ নানা ধরণের ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
এবার ঈদের বন্ধ দেওয়া হয়েছে ১০দিন। তবে বেশুরভাগ বন্ধই ঈদের পরে। ঈদের আগে শুধুমাত্র ০৫ ও ০৬জুন বন্ধ থাকায় এই দুইদিনেই সব যাত্রী বাড় ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই যাত্রীদের ভীড় সবখানে। ঈদের ছুটি নিয়ে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বলে জানিয়েছে সাধারণ যাত্রীরা।