
ইরানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মিশরের নেতৃত্বে ২১টি মুসলিম-প্রধান দেশের যৌথ বিবৃতি থেকে বাংলাদেশ বাদ পড়েছে। সম্প্রতি শ্রেষ্ঠ মুসলিম শাসক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশকে এই বিবৃতিতে অন্তর্ভুক্ত না করায় মুসলিম বিশ্বের জোটগুলোর কাছে দেশটির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই ঘটনা উদ্বেগজনক প্রশ্ন তুলেছে—মুসলিম দেশগুলোর জোট কি বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল ব্লকের সাথী হিসেবে বিবেচনা করছে?আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা শুরু করে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলায় কমপক্ষে ৭৮ জন নিহত এবং ৩২৯ জন আহত হয়েছেন। ইরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যাতে ইসরায়েলে অন্তত ৩৪ জন আহত হয়েছেন। উভয় দেশে মোট ৩০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
মিশরের নেতৃত্বে জারি করা যৌথ বিবৃতিতে তুরস্ক, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, বাহরাইন, ব্রুনেই, চাদ, গাম্বিয়া, আলজেরিয়া, কোমোরোস, জিবুতি, সৌদি আরব, সুদান, সোমালিয়া, ইরাক, ওমান, কাতার, কুয়েত, লিবিয়া, মিসর এবং মাউরিতানিয়া অংশ নিয়েছে। এই দেশগুলো ইসরায়েলের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশেষ করে, আফ্রিকার ক্ষুদ্রতর দেশগুলো, যেমন চাদ, গাম্বিয়া এবং জিবুতি, এই বিবৃতিতে অংশ নিলেও বাংলাদেশের নাম অনুপস্থিত।বাংলাদেশ ১৩ জুন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক পৃথক বিবৃতিতে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে, বলেছে, “কূটনৈতিক সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির একমাত্র পথ। আমরা সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং উত্তেজনা বাড়ায় এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।” জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলও একই দিনে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সমর্থনের সমালোচনা করেছে।
তবে, যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের অনুপস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন—মার্কিন সংস্পর্শের কারণেই কি বাংলাদেশকে এই বিবৃতিতে যুক্ত করা হয়নি?বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং মার্কিন সমর্থনপুষ্ট কূটনৈতিক অবস্থান, এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বাংলাদেশের পৃথক বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত কূটনৈতিক স্বাধীনতার প্রতিফলন হতে পারে, কিন্তু মুসলিম জোটের যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের অনুপস্থিতি মুসলিম বিশ্বে দেশটির প্রভাব হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। এটি মনে করিয়ে দেয় যে মার্কিন-ইসরায়েল ব্লকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাংলাদেশের অবস্থানকে জটিল করেছে।”
ইরানে প্রায় ২,৫০০ বাংলাদেশি নাগরিক, যাদের মধ্যে ২০০ জন শিক্ষার্থী, হামলার মধ্যে আটকে পড়েছেন। তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বিমান হামলার শব্দ ও সাইরেনের কারণে এই নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।ইরান যুদ্ধবিরতির জন্য কাতার ও ওমানের মাধ্যমে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তাদের অভিযান দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, এবং বাংলাদেশের যৌথ বিবৃতি থেকে বাদ পড়া মুসলিম বিশ্বে দেশটির কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।