Home / অন্যান্য / জাতীয় / বাংলাদেশের ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সেনাবাহিনীতে রহস্যময় তৎপরতা!

বাংলাদেশের ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সেনাবাহিনীতে রহস্যময় তৎপরতা!

বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সামরিক নেতৃত্বের গোপন কক্ষগুলোতে এক অদৃশ্য উত্তেজনা। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের আশপাশে ঘনীভূত হচ্ছে এক রহস্যময় পরিকল্পনা, যার নাম ‘মানবিক করিডর’। এই নামের আড়ালে কী লুকিয়ে আছে—মানবিক সহায়তার মহৎ উদ্দেশ্য, নাকি কোনো গভীর ষড়যন্ত্রের ছায়া?

লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের মধ্যে ঘন ঘন বৈঠকের ঘটনা এই রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু।

১০ই মে এক ঘণ্টার গোপন আলোচনার পর, ১২ই মে সকাল ৯:১৫-এ আবারও ৩০ মিনিটের জন্য মুখোমুখি হন তারা। আপাতদৃষ্টিতে এই বৈঠকগুলোর উদ্দেশ্য কক্সবাজারে বসবাসরত ১৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের জন্য একটি ‘মানবিক করিডর’ গঠন।

কিন্তু সূত্রের খবর, এই আলোচনার পেছনে লুকিয়ে আছে আরাকান আর্মির জন্য লজিস্টিক ও সরবরাহ সহায়তার একটি গোপন পরিকল্পনা। এই দুই নেতার বারবার মিলিত হওয়ার পেছনে কি শুধুই মানবিক উদ্দেশ্য, নাকি এটি একটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক খেলার অংশ?

এই রহস্যের আরেকটি স্তর যোগ করেছে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের অদ্ভুত সিদ্ধান্ত। পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনি ১১ই মে হাওয়াইয়ের হনুলুলুতে ল্যান্ড ফোর্সেস প্যাসিফিক (ল্যানপ্যাক) সিম্পোজিয়ামে যোগ দিতে রওনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ তার ভ্রমণসূচি বদলে যায়। এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এক মাসব্যাপী সফরে যাচ্ছেন, যার মধ্যে রয়েছে ‘বর্ধিত ছুটি’।

এই সময়ে দেশের সামরিক নেতৃত্বের শীর্ষে তার অনুপস্থিতি কি কেবলই কাকতালীয়, নাকি এর পেছনে কোনো গোপন উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে?

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (এএফডি) এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) এই ‘মানবিক করিডর’কে একটি ‘জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা এটিকে সীমান্ত সুরক্ষা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করে।

তাদের ভাষায়, এটি এমন একটি বিষয় যার জন্য প্রয়োজন একটি ‘নির্ণায়ক প্রতিক্রিয়া’। এই দুই প্রতিষ্ঠানের ‘সক্রিয় এবং ব্যাপক ভূমিকা’ পালনের প্রতিশ্রুতি কি কেবল শরণার্থী সংকট সমাধানের জন্য, নাকি এর পেছনে আরও গভীর কৌশলগত লক্ষ্য রয়েছে?

এই ঘটনার মাঝে নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কিন নাগরিক খলিলুর রহমানের কূটনৈতিক তৎপরতা যেন রহস্যের আরেকটি পর্দা উন্মোচন করছে। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি ঢাকার বারিধারা এলাকায় মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন এবং মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন।

ঠিক একই সময়ে পাকিস্তানের হাইকমিশনার আয়েদ আহমেদ মারুফ শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হন। তার একদিন আগে তিনি কক্সবাজারে জামায়াত-ই-ইসলামী এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ)-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছিলেন। এই সমান্তরাল কূটনৈতিক তৎপরতা কি কেবলই কাকতালীয়, নাকি এটি একটি সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ?

এদিকে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসানের দিনের শেষে কক্সবাজার সফর এই রহস্যের আরেকটি মাত্রা যোগ করেছে। তিনি কক্সবাজারের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সঙ্গে সম্মেলনের জন্য দ্রুত সেখানে যান এবং একই সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে আসেন। এই তড়িৎ সফরের পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল? শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, নাকি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কোনো গোপন নির্দেশনা ভাগ করে নেওয়া?এই ঘটনাপ্রবাহের মাঝে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বার্লিন সফর যেন একটি সমান্তরাল বর্ণনা তৈরি করছে। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দিতে রওনা হচ্ছেন, যেখানে শান্তিরক্ষা মিশনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হবে। তার সঙ্গে রয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, মেজর জেনারেল হুসাইন মুহাম্মদ মাসিহুর এবং আরও দুই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিরক্ষা সম্মেলনের সহ-সভাপতি হিসেবে এই সফর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করলেও, দেশের অভ্যন্তরে চলমান ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি একটি সংবেদনশীল মোড়ে পৌঁছেছে।‘মানবিক করিডর’ কি সত্যিই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের জন্য একটি মহৎ উদ্যোগ, নাকি এটি একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক খেলার ছদ্মবেশ?

আরাকান আর্মির জন্য সরবরাহ সহায়তা, পাকিস্তানি কূটনীতিকের গোপন বৈঠক, মার্কিন কূটনীতিকের সঙ্গে রহমানের দীর্ঘ আলোচনা, এবং জেনারেল জামানের অপ্রত্যাশিত ছুটি—এই সবকিছু মিলে একটি অদৃশ্য জালের ইঙ্গিত দিচ্ছে।এই জালের কেন্দ্রে কী রয়েছে? ক্ষমতার খেলা, আঞ্চলিক আধিপত্য, নাকি জাতীয় নিরাপত্তার নামে কোনো গোপন পরিকল্পনা? সময় এবং ঘটনাপ্রবাহই হয়তো এই রহস্যের পর্দা উন্মোচন করবে।

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *