
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচি ঘিরে গতকাল বুধবার হামলা-সংঘর্ষে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন কোটালীপাড়া উপজেলার রমজান কাজী। তাঁকে হারিয়ে কান্না থামছে না বাবা কামরুল কাজীর। তিনি আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার ছেলে তো কোনো দোষ করেনি। তাকে কেন মেরে ফেলা হলো? আমি আমার সন্তানকে কোথায় পাব!’
নিহত অন্য তিনজন হলেন– গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা, টুঙ্গিপাড়ার সোহেল রানা ও সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন তালুকদার।নিহত দীপ্ত সাহার কাকা হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দীপ্ত দুপুরের খাবার খেয়ে তাঁর দোকানে যাচ্ছিল। শহরের চৌরঙ্গীতে তাঁর পেটে গুলি লাগে বলে জানতে পারি।’
নিহত সোহেল মোল্লা গোপালগঞ্জ শহরের চৌরঙ্গী এলাকার কেরামত আলী প্লাজায় মোবাইল ব্যবসায়ী ছিলেন। একই মার্কেটের দোকানদার জনি খান তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।‘নিহতরা সবাই ছাত্রলীগ কর্মী ও আওয়ামীলীগের সমর্থক বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে জানান,”টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এনসিপির মঞ্চে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় পদযাত্রায় উপস্থিত হওয়া গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষই বিক্ষুব্ধ হয়ে মঞ্চে হামলা শুরু করে।”
গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা ট্রাইব্যুনাল বিডি কে বলেন,”আমাদের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচী ছিল,সেই কর্মসূচিতে পুলিশ বাঁধা প্রদান ও সেনাবাহিনী গুলি চালায়।এতে কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে। আমাদের ৫/৬জন নেতাকর্মী নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন।আমরা পুলিশ-সেনাবাহিনীর এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে বুধবার দুপুরে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশ হয়। একই দিন গোপালগঞ্জে আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ‘বিক্ষোভ মিছিল’ কর্মসূচী ছিল। তাদের মিছিলে পুলিশ বাঁধা দেওয়ায় নেতাকর্মীরা উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সভার আগে এনসিপির সমাবেশস্থলে ২০০-৩০০ স্থানীয় জনগণ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়।
পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আ’লীগ কর্মীরা মঞ্চের চেয়ার ভাঙচুর করে ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। সভা শেষে এনসিপি নেতারা গাড়িতে উঠে সমাবেশস্থল ত্যাগ করার সময় গাড়িবহরে হামলা হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। হামলাকারীরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় চারজন নিহত হন।আরও ৯জন গুলিবিদ্ধ হন এবং দেড় শতাধিক আহত হন।
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের কর্মকর্তা জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, ৯ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের অস্ত্রোপচার চলছে।এদিকে সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হওয়া এক যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত সুমন বিশ্বাস (২৫) পেশায় গাড়িচালক। তাঁর ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুল ও পেটে গুলি লেগেছে।